অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ জটিলতা ও অপারেশন

অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগের নাম কমবেশি সবাই শুনেছি। বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকির কারণে অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে সার্জিক্যাল ইমার্জেন্সি (surgical emergency) হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ লক্ষণ দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করা লাগতে পারে। এ কারণে একে অবহেলা করা উচিত নয়।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস কি?
অ্যাপেন্ডিক্স হচ্ছে খাদ্যনালীর বৃহদন্ত্র অংশের সংযোগস্থলে অবস্থিত আঙ্গুলের মতো দেখতে একটি ছোট থলি। পীড়া, আঘাত বা সংক্রমণের কারণে অ্যাপেনডিক্সে প্রদাহ হলে তা ফুলে ওঠে এবং ব্যথা অনুভূত হয়। ডাক্তারি ভাষায় এটাকেই অ্যাপেন্ডিসাইটিস বলা হয়।

কেন এবং কিভাবে হয়?
কোন কারণে অ্যাপেন্ডিক্সে খাদ্য বা মল ঢুকে গেলে কিংবা কৃমি আটকে গেলে সেখানে রক্ত ও পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। এ অবস্থায় নানান জীবাণুর আক্রমণে অ্যাপেনডিক্সে প্রদাহ হয় এবং বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।
উপসর্গ ও লক্ষণসমূহ:
১. পেটে ব্যথা। সাধারণত নাভীর কাছ থেকে শুরু হয়ে পেটের ডান দিকের নিম্নাংশে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে।
২. ক্ষুধামন্দা
৩. বমি বমি ভাব হওয়া
৪. বমি হওয়া
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া
৬. জ্বর থাকতে পারে। তবে সাধারণত অতি উচ্চমাত্রায় নয়।
৭. অ্যাপেন্ডিক্স কোন কারণে ফেটে গেলে পেরিটোনাইটিসের উপসর্গ নিয়ে রোগী আসে। তখন সারা পেট জুড়ে অনেক বেশি ব্যথা অনুভূত হয়। পেট ফুলে যায় এবং পেটে শক্ত ও চাপ চাপ ভাব অনুভূত হয়।

জটিলতা:
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণগুলো দেখো দিলে খুব দ্রুত কোন সার্জারি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। তা না হলে পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরী হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে অ্যাপেন্ডিসাইটিস থেকে নিম্নোক্ত জটিলতাগুলো তৈরী হতে পারে-
১. গ্যাংগ্রিন বা পঁচন ধরা
২. অন্ত্র বা খাদ্যনালী ছিদ্র হয়ে যাওয়া
৩. পেরিটোনাইটিস
৪. শক (shock)
৫. অ্যাপেনডিকুলার লাম্প হওয়া

অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা ও অপারেশন পরবর্তী জটিলতাসমূহ

চিকিৎসা:
বিভিন্ন ধরণের ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের পর চিকিৎসা দেয়া হয়। অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসায় সাধারণত অপারেশন করা হয়। অপারেশনের নাম অ্যাপেন্ডেকটমি। ল্যাপারোস্কোপিক (কী হোল) পদ্ধতিতে পেটের নিচের অংশে তিনটা ছোট ছিদ্র করে এই অপারেশন করা হয়। জটিলতাপূর্ণ রোগীদের ক্ষেত্রে তলপেট কেটে এই অপারেশন করা হয়।

ল্যাপারোস্কোপিক অ্যাপেনডেকটমির পরে রোগীকে সাধারণত ২ দিন বা তারও কম সময় হাসপাতালে থাকতে হয়। পেট কেটে অপারেশন করা হলে রোগীকে হয়তো ৪ বা ৫ দিন পর্যন্ত হাসপাতালে থাকতে হতে পারে। মনে রাখতে হবে, অ্যাপেনডিক্স ছাড়াও রোগী স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। যদি রোগ নির্ণয় অস্পষ্ট হয়, তবে ইমার্জেন্সি রুমে অথবা হাসপাতালে ভর্তি করে রোগীকে ১২-২৪ ঘন্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

হাসপাতাল ত্যাগের পর করণীয়:
১. বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম
২. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার গ্রহণ
৩. বারবার করে অল্প অল্প খাবার খাওয়া
৪. ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া
৫. ধীরে ধীরে হাঁটা ও কাজের পরিমাণ বাড়ানো
৬. নির্দেশিত ওষুধ নিয়মমাফিক সেবন করা।
অপারেশন পরবর্তী জটিলতা:
অপারেশনের পরে ক্ষতস্থানে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে:
১. সেলাইয়ের স্থানে লাল হয়ে গেলে বা উষ্ণ অনুভব করলে
২. ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বের হলে
৩. জ্বর হলে।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস কোন জটিল রোগ নয়। কিন্ত একটু অবহেলায় অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ধারাবাহিতায় অনেক সময় মৃত্যুও পারে। তাই এই রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং সময়মত সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

Loading

শেয়ার করুন

Leave a Reply