কাঁঠালের ১২টি চমকপ্রদ স্বাস্থ্য উপকারিতা

কাঁঠালের পরিচিতি

কাঁঠাল আমাদের বাঙালির প্রিয় ফলের মধ্যে একটি ফল। গ্রীষ্মের চরম দাবদাহে এই রসালো ফলে জিুড়ায় আমাদের প্রাণ এবং মেটে পানির অভাব। তবে দেখা যায় যে, অনেকেই এই ফলের বিষযে নাক সিঁটকান।নানান পুষ্টিগুণে পুরোপুরি ভরপুর কাঁঠাল। সাধারণত আলুর চিপস আমাদের সকলেরই কমবেশি পরিচিত। আমাদের হয়ত অনেকেরই জানা নাই যে, খাজা কাঁঠালের কোয়াকে শুকনো করে তেলে ভেজে যে চিপস তৈরি হয়, সেটা কিন্তু পটেটো চিপসের থেকেও অনেক সুস্বাদু হয়। আবার কাঁঠালের রস খেলে শরীরে প্রচুর শক্তি সঞ্চারন হয়ে।

কাঁঠালকে বাংলাদেশের জাতীয় ফল ঘোষণা করা হয়েছে, এর ইংরেজী নাম হচ্ছে (Jackfruit)। বাংলাদেশের কম-বেশি সব স্থানেই কাঁঠাল পাওয়া যায়। সাধারণত আমাদের দেশে বসন্ত ও গ্রীস্মের প্রথমে কাঁচা অবস্থায় এবং গ্রীস্ম ও বর্ষায় পাকা অবস্থায় কাঁঠাল পাওয়া যায়। এ ফলটি আকারে বেশ বড়-সড় হয়ে থাকে।কাঁঠাল পুষ্টিগুনে ভরপুর একটা ফল।

কাঁঠালের চাষ

শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের প্রায় অধিকাংশ স্থানেই কাঁঠাল পর্যাপ্ত আকারে পাওয়া যায়। তবে কাঁঠাল সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় ফিলিপাইনে। ব্রাজিলের উপকূলবর্তী এলাকায় কাঁঠাল চাষ হয়ে থাকে। ওখানে কাঁঠালের রস আলাদাভাবে প্যাকেট বা কৌটোবন্দি করে বাজারে বিক্রি করা হয়।

কাঁঠালের পুষ্টিগুণ

রসালো ফল কাঁঠালে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, বি-১, বি-২, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ নানা রকমের পুষ্টি ও খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। এই সকল পুষ্টিকর উপাদান আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর পাশাপাশি কাঁঠাল আমাদের ভিটামিনের চাহিদাও পূরণ করে। সাধারণত কাঁঠালের বিচিতে ৬.৬ গ্রাম আমিষ আছে ও ২৫.৮গ্রাম শর্করা আছে। আমাদের সবার জন্যই আমিষসমদ্ধ কাঁঠালের বিচি বেশ উপকারী।

এজন্য আমাদের সবাইকে কাঁঠাল গাছ বেশি লাগানো উচিত। সেই সঙ্গে কাঁঠাল ফলটি খেয়ে ভিটামিন ‘এ’- এর ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব।স্বাভাবিক আকারের কাঁঠালের ৪-৫ কোয়া থেকে ১০০ কিলো ক্যালরি পর্যন্ত খাদ্য শক্তি পাওয়া যায়। কাঁঠালের হলুদ রঙের কোষ হচ্ছে ভিটামিন ‘এ’ সমদ্ধ। ২-৩ কোয়া কাঁঠাল আমাদের এক দিনের ভিটামিন ‘এ’ এর চাহিদা পূরণ করে।

কাঁঠালের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ

১) শক্তির উৎস কাঁঠাল: কাঁঠালে পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা, ক্যালোরি, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ রয়েছে, যা আমাদের শরীরে দ্রুত শক্তি বাড়ায়। একই সঙ্গে কাঁঠালে কোন কোলেস্টেরোল জাতীয় উপাদান নেই যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। সে কারণে এ ফলটিকে বেশ স্বাস্থ্যকর ফলের তালিকায় আমরা স্থান দিয়ে থাকি।

২) কাঁঠাল রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে: আমাদের সর্দি-কাশি, জ্বরের মতো সাধারণ নানা রোগকে প্রতিহত করে এই রসালো কাঁঠাল। সাধারণত ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের দারুণ উৎস কাঁঠাল।

৩) রক্তস্বল্পতা রোধে কাঁঠালঃ কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, ই, কে, নিয়াচিন, ফলেট, এবং ভিটামিন বি-৬। এছাড়াও আছে বিভিন্ন ধরণের মিনারেল সমৃদ্ধ উপাদান যেমনঃ কপার, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম যা রক্ত তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই এটি রক্তস্বল্পতা রোধে দারুণ কাজ করে থাকে। তাই যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্যে এই রসালো ফল কাঁঠাল উপকারি হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

৪) গর্ভবতী মায়ের খাবারঃ চিকিৎসা শাস্ত্র মতে, প্রতিদিন ২০০ গ্রাম তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভবতী মহিলা ও তার গর্ভধারণকৃত শিশুর প্রায় সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয়। গর্ভবতী মহিলারা নিয়মিত প্রতিদিন নিদিষ্ট পরিমাণে কাঁঠাল খেলে তার স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকে এবং গর্ভস্থসন্তানের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়। দুগ্ধদানকারী মা যদি তাজা পাকা কাঁঠাল খায় তাহলে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

৫) দুরারোগ্য ব্যাধি প্রতিরোধেঃ কাঁঠালে বিদ্যমান প্রচুর পরিমাণে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস- যা কিনা আমাদের শরীরে আলসার, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সক্ষম। কাঁঠালে আছে প্রয়োজনীয় পরিমাণে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রির‌্যাডিকেলস থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও আমাদেরকে সর্দি-কাশি রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

৬) চোখ ভাল রাখেঃ কাঁঠালে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-এ, যা আমাদের চোখের জন্য অপরিহার্য একটি পুষ্টি উপাদান। আপনারা হয়ত অনেকেই জানেন না যে, কাঁঠাল খাওয়ার অভ্যাসে দৃষ্টিশক্তি ভালো হয় এবং এটি আমাদের ত্বকের বলিরেখা বা ভাঁজ প্রতিহত করতে সক্ষম। যেহেতু, রসালো ফল কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে, তাই এটি চোখের রেটিনা বা অক্ষিপটের ক্ষতি প্রতিহত করে থাকে।

৭) হাড় মজবুত ও শক্ত করেঃ আমরা জানি কাঁঠালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে।এই ক্যালসিয়ামের আধিক্যের জন্যে এটি হাড়ের গঠন সুদৃঢ় ও মজবুত করে। এটি অস্টেওপরোসিস (osteoporosis) নামে হাড়ের ক্ষতিকর রোগ প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আপনি যে কেউ হাড় মজবুত করার জন্যে খাবারের তালিকায় নিতে পারেন জাতীয় ফলের সাহায্য।

৮) খনিজ উপাদানঃ রসালো ফল কাঁঠালে আছে বিপুল পরিমাণে খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ, যা রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আপনারা চাইলে ছয় মাস বয়সের পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে কাঁঠালের রস খাওয়ালে শিশুর ক্ষুধা নিবারণ হয়। অন্যদিকে তার প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব পূরণ হয়ে থাকে।

৯) আপনার স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে: পাকা কাঁঠালে রয়েছে পর্যাপ্ত পটাসিয়াম, যা আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে যার ফলে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে পায়।

১০) হজমশক্তি বাড়াতে কাঁঠাল: আমরা আমাদের হজমশক্তির জন্য কত কিছুই না খেয়ে থাকি। এই হজমের জন্য উপাদেয় একটা ফল কাঁঠাল এবং এটি আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিহত করে। কারণ, এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় পরিমাণে হজমে সহায়ক আঁশ।

১১) পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎসঃ কাঁঠাল হচ্ছে পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট একটি উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পটাশিয়ামের পরিমাণ ৩০৩ মিলিগ্রাম। যারা পটাশিয়াম আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এ জন্যে কাঁঠালে উচ্চ রক্ত চাপের উপশম হয়ে থাকে।

১২) মলাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধে ও চিকিৎসায়: সাধারনত কাঁঠালে যে ডায়েটারি ফ্যাট উপাদানটি রয়েছে, তা আমাদের শরীরের মলাশয় থেকে বিষাক্ত উপাদানসমূহ পরিষ্কার করে। এতে করে মলাশয়ের ওপর বিষাক্ত উপাদানসমূহের ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের শরীরে পড়তে দেয় না এমনকি মলাশয়ের ক্যান্সার প্রতিহত করে।

কাঁঠালের ঔষধি গুনাগুন

সাধারণত কাঁঠাল গাছের শেকড় হাঁপানী উপশম করতে অনেকাংশে সক্ষম। শেকড় সেদ্ধ করলে যে উৎকৃষ্ট পুষ্টি উপাদান নিষ্কাশিত হয়, তা হাঁপানীর প্রকোম নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। সুধু তাই নয়, টেনশন এবং নার্ভাসনেস কমাতে কাঁঠাল বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

সবশেষে

আয়ুর্বেদিকের ভাষায় কাঁঠালকে সাধারণত রসায়ণ বলে। সাধারণত কাঁঠাল কাঁচা অবস্থায় থাকলে এঁচড় বলে। কাঁঠালের তরকারি বাঙালির অন্যতম প্রিয় একটা খাবার। কাঁঠালের এঁচড়ে প্রচুর শর্করা থাকে। রান্না করলে এর স্বাদ অনেকটা আলুর মতো মনে হয়ে থাকে। আবার শুকনো হয়ে গেলে অনেকটা সেঁকা রুটির মতোন লেগে থাকে। তাই একে গ্রামের দিকে অনেকটা রুটিফলও বলে থাকে। তবে সতর্কতা হল এই যে, যাঁদের হজম ক্ষমতা কম, তাঁদের এঁচড় না খাওয়াই ভাল। শুধু খেতে কাঁঠাল ফলই নয়, পাতা, বীজ, কাঠ সব কিছুই কাজে লেগে যায়।

Loading

শেয়ার করুন

Leave a Reply