চাকুরির নামে ভুয়া বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় : এ প্রতারণার অবসান কবে হবে?
মিজানুর রহমান রানা :
বছর দশ থেকে বারো বছর আগের কথা। আমি তখন চাঁদপুর শহরে থাকতাম। ছোটখাটো ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু তাতে আমার পরিবারের ব্যয় সঙ্কুলান করা সম্ভব হতো না। আমি চাইছিলাম পরিবারের ব্যয় সঙ্কুলানোর জন্য আয় বাড়ানোর। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। অনেকটা হতাশই হয়ে পড়েছিলাম।
এর মধ্যে একদিন উপরোক্ত বিজ্ঞাপনটি পেলাম পত্রিকায়। আমি যেহেতু গ্রাজুয়েট তাই দেখলাম ওই পদে লোভনীয় অফার রয়েছে। ভাবলাম যদি চাকুরিটা হয়ে যায়, তাহলে আমার পরিবার স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারবে।
অনেক ভেবেচিন্তে আমি তাতে আবেদন করলাম। ওই বছরের রোজার সময় আমার নামে ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু হলো।
রোজার সময় আমি কোথায়ও যাই না। কারণ এতে রোজা রেখে কোথায়ও ভ্রমণে আমার বেশ পরিশ্রম হয়। তাছাড়া আমার কাছে ঢাকা যাবার মতোও অর্থ ছিলো না। তবুও চাকুরির আশায় ধার-দেনা করে দুই হাজার টাকা নিয়ে রোজার মধ্যেই ঢাকা রওয়ানা করলাম।
যথারীতি তাদের অফিসে গিয়ে হাজির হলাম। বেশ চাকচিক্যময় অফিস তাদের।
এসব প্রতারকদের অফিসগুলো বেশ চমৎকার হয়। তাদের চমৎকার ডেকোরেটর করা অফিসে গিয়ে দেখলাম আমার মতো আরো অনেক প্রার্থী অপেক্ষার প্রহর গুণছেন।
আগের প্রার্থীদের ইন্টারভিউ শেষ হয়ে যথারীতি অনেক অপেক্ষার পর আমার ডাক আসলো। আমি যথারীতি ইন্টারভিউ বোর্ডে হাজির হলাম। ইন্টারভিও বোর্ডে যাদেরকে দেখলাম, তাদের আচার আচরণ দেখেই আমার বেশ সন্দেহ হলো।
তো যথারীতি শুরু হলো ইন্টারভিও।
ইন্টারভিউ বোর্ডের তিনজনের একজন প্রশ্ন করলেন, আপনি এ চাকুরিটা পেলে কি করবেন?
আরেকজন প্রশ্ন করলো, আপনার তো চাকুরির বয়সসীমা শেষ, এতোদিন কি করছেন?
তাদের এসব মামুলি প্রশ্ন আমাকে তাদের সম্পর্কে আরো সন্দিহান করে তুললো।
এরই মধ্যে তাদের এই মামুলি ইন্টারভিউর মাধ্যমেই আমি নির্বাচিত হয়ে গেলাম। এরপর তারা আমাকে একটা জয়েন লেটার দিলে বললো, আপনি নির্বাচিত হয়ে গেছেন। আগামী এক সপ্তাহ পর আপনি জয়েন করবেন। আপনাকে জয়েন বাবদ দশ হাজার টাকা দিয়ে চাকুরিতে যোগদান করতে হবে।
প্রাথমিক অবস্থায় আমি বিষয়টা না বুঝতে পারলেও বাড়ি আসার সময় ধীরে ধীরে তাদের প্রতারণার বিষয়টি বুঝে গেলাম। যদি এই বিজ্ঞপ্তি পড়ে কমপক্ষে ৫ হাজার চাকুরি প্রার্থীও আবেদন করে, তারা সবাই নির্বাচিত হবে। প্রত্যেকে যদি ১০ হাজার টাকা করে দেয় তাহলে (5000*10000=50000000/- ) ওই প্রতারকরা আয় করবে ৫ কোটি টাকা।
বিষয়টি আমি ভাবতে ভাবতে বাড়ি চলে এলাম।
এরপর থেকে বহুবার ওই বিজ্ঞপ্তি দেখেছি। আজও দেখলাম। সব একই শুধু তাদের ঠিকানা পরিবর্তিত হয়েছে।
তাই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখবেন আশা করছি। যাতে চাকুরির নামে বেকার যুবক তরুণ ভাইরা সর্বস্বান্ত না হয়।
প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার
চাঁদপুর রিপোর্ট : এমআরআর/
82 সর্বমোট পড়েছেন, 1 আজ পড়েছেন