গোলাম নবী খোকন, বিশেষ প্রতিনিধি:
শুধু রাতের বেলাতে নয়, দিনের বেলাতেও মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে নিয়মিত বসছে জমজমাট ইলিশের হাট। দক্ষিন বোরচরে ও চরউমেদে রাতে জমজমাট ইলিশের হাট বসলেও দিনের বেলাও হাট চালাচ্ছে বীরদর্পে। প্রশাসন মা ইলিশকে রক্ষার জন্য মেঘনা নদীর পূর্ব অঞ্চলে অভিযান চালালেও পশ্চিম অঞ্চল থাকছে অরক্ষিত। মা ইলিশ ধরা পড়ছে ঝাঁকেঝাঁকে এবং তা বিক্রি হচ্ছে পানির দামে। পানির দামে বিক্রি হলেও প্রতিদিন পাইকারী বেচাকেনা হচ্ছে কোটি টাকার ওপরে।
উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ের দক্ষিন বোরচরে মা ইলিশের আড়ৎগুলো সবচেয়ে জমজমাট। এখানে একজন জনপ্রতিনিধিরও মা ইলিশের আড়ৎ রয়েছে। রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী এক নেতার আড়ৎ। চরউমেদের নদীর পাড়েও মা ইলিশের আড়ৎ রয়েছে। এই দুই অঞ্চলের আড়ৎ এ দিনে-রাতে কোটি টাকার ওপরে বেচাকেনা হয় বলে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তদিয়ে জানান কয়েকজন আড়ৎদার। আর এসব আড়ৎ বা হাটে বেচা-কেনা হচ্ছে উৎসবমূখর পরিবেশে। পাইকারী ছাড়া এখানে কোন রকমের খুচরা বিক্রি হয় না। নৌ পথে এখানকার মা ইলিশ যাচ্ছে রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম জানায় এখানকার রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা জড়িত আছে বলেই যে যার মতো করে মা ইলিশগুলো ধরছে এবং হাট বসিয়ে বিক্রি করছে।
খোজ খবর মতে, চরাঞ্চলে মা ইলিশের আড়ৎগুলো তুলনামূলক বেশী জমজমাট থাকে বেলা ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত, বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, রাত সাড়ে ৭টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। অন্য সময়েও মাছ আসে তবে তুলনামূলকভাবে কম।
উপজেলার মূল ভূখন্ডের মেঘনা নদীর পাড়ের স্থায়ী মৎস্য আড়ৎগুলো বন্ধ থাকলেও মেঘনা পাড়ের লঞ্চঘাটগুলো সংলগ্ন অঞ্চল, মেঘনার পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে মা ইলিশ। এছাড়া বাড়ী বাড়ী গিয়েও মা ইলিশ ফেরি করে বিক্রি করাতো হচ্ছেই। দিনের বেলাতে মেঘনা নদীর পূর্ব অঞ্চলের (উপজেলার মূল ভ’খন্ড লাগোয়া) জেলেদের মাঝে পুলিশী আতংক থাকলেও সন্ধ্যার পর পুলিশী আতংক কেটে যায়। তবে মেঘনা নদীর পশ্চিমাংশের নদীতে জেলেদের কোন রকমের ভয় কাজ করেনা। কেননা, সেখানে মা ইলিশ রক্ষাকারী মতলব উত্তর উপজেলার টাক্সফোর্স যায়না বল্লেই চলে।
ফলে মেঘনায় জেলেরা নির্দিধায় প্রজননের জন্য মেঘনা নদীতে আসা মা ইলিশ গুলো ধরছে ঝাঁকেঝাঁকে। আর এর নেপথ্যে কাজ করছে স্থানীয় কিছু অর্থলোভী প্রভাবশালী লোক। যাদের সাহস যোগানোর কারনেই জেলেদের বড় একটি অংশ একাজে সাহস পাচ্ছে। সন্ধ্যার পর মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে মা ইলিশ শিকার ও বিক্রির উৎসবমুখর দৃশ্য দেখলে যে কারোর মনেই উপজেলা টাক্সফোর্সের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়েতো প্রশ্ন উঠতেই পাড়ে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন বলেন, উপজেলার ষাটনল থেকে আমিরাবাদ পর্যন্ত এতো বিশাল অঞ্চল ২২ দিন দেখাশুনার জন্য সরকারী বরাদ্ধ খুবই কম। অঞ্চল ও কাজের তুলনায় যা খুবই সামান্য। তার পরেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আগে কোস্টগার্ড থাকলেও আমার উপজেলায় এবারে কোস্টগার্ডের কোন ক্যাম্প নেই।
এ ব্যাপারে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা টাক্সফোর্সের সভাপতি শারমিন আক্তার জানান, মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
প্রকাশিত : ১৭ অক্টোবর ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার
চাঁদপুর রিপোর্ট : এমআরআর/