সততার জন্যে সিএনজি মালিক সমিতিকে সাধুবাদ

সম্পাদকীয়…
মানুষ চুরি করে, ছিনতাই করে, সুযোগ পেলেই ঠকায়। আর ভুল করে কেউ কারো ফেলে যাওয়া মালামাল যদি ফেরত দিতে শোনা যায় তাহলে সেটা কেমন শোনায়? নিশ্চয় সেটা মহান ও উদার মনেরই পরিচয় প্রকাশ করে। এতে অবশ্যই হতবাক ও আশ্চর্য হওয়ার বিষয়ই। আমরা সকলেই বলে থাকি যে, জগতে সৎ লোকের বড়ই অভাব!
চারিদিকে অসততা, ঠকবাজি, মিথ্যাচার ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু এরই মাঝে কিছু সৎ লোক পৃথিবীতে বেঁচে আছেন। তারা নীরবেই মানুষের উপকারই করে যাচ্ছেন-এতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং সে দিকটি চিন্তা করলে আমরা বলতেই পারি যে, জগতে সৎ কিছু এখনো বেঁচে আছেন। তাদের কারণে আমরা এখনো সঠিক আলো দেখতে পাই। কোনটা ভালো কাজ সেটা পরিস্কার বুঝতে পারি।

চাঁদপুর রিপোর্ট ডট কমে ‘চাঁদপুরে যাত্রীদের ফেলে যাওয়া ব্যাগ ও মালামাল সংগ্রহ রেখে ফেরত দিচ্ছেন সিএনজি মালিক সমিতি’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি সততার সর্বোত্তোম উদাহরণ। সত্য উদাহরণ আমাদের সৎভাবে বাঁচতে শেখায়, আমাদের সৎভাবে বাঁচার অনুপ্রেরণা দান করে। ইচ্ছে করে তাদের মতো হয়ে বেঁচে থাকতে। আহা! যদি এমন সকলেই করতো তাহলে কতোই না ভালো হতো।
প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, ‘সিএনজি স্কুটারে যাত্রীদের ভুলে ফেলে যাওয়া ভ্যানেটি ব্যাগ, ম্যানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন সহ বিভিন্ন মালামাল সংগ্রহ রেখে তা ফেরত দিচ্ছেন চাঁদপুর জেলা সিএনজি স্কুটার মালিক সমিতি কর্তৃপক্ষ।
আর এই প্রশংসনীয় কাজটি করে চলেছেন প্রায় ৯ বছর ধরে। এমন সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে একদিকে যেমন প্রশংসা কুড়াচ্ছেন মালিক সমিতি, অন্যদিকে যাত্রীরাও তাদের হারানো মালামাল ফেরত পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন।’
এটা খুবই ভালো কাজ! মানুষের মনের কাছে পৌঁছে যাওয়ার কাজ। মন উদার করা ও পরিস্কার করার কাজ, মহব্বতের কাজ। জীবন বিলিয়ে দিয়ে সৎভাবে বেঁচে থাকার মধ্যে যে অন্যরকম সুখানুভূতি আছে-সে ধরণেরই কাজ। মানুষ কোনো কিছু ইচ্ছে করে ভুল করে রেখে যায় না কিছু।
এটা হয়ে যায়, ভুল করে ফেলে যায় মানুষ। হতে পারে সেগুলো দামী অথবা কম মূল্যের। অথবা কারো কাছে কম মূল্যের হলেও কারো কাছে সম্পদ! আর সেই সম্পদ যখন কেউ ভুল করে হারিয়ে ফেলে বা ভুল করে কোথাও ফেলে রেখে যায়, তখন তার মানসিক যাতনা খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করে। সেই তখন ধরে নেয় যে, হারিয়ে যাওয়া জিনিস সে আর কোনোদিনই ফেরত পারে না।
তবুও সেই হতাশা মনে নিয়েও কখনো কখনো সে খুঁজে বেড়ায়-যদি ভাগ্য ভালো হলে পেয়ে যায়। কিন্তু আমরা এখানে দেখেছি চাঁদপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে সিএনজি স্কুটারে যাতায়াতকৃত যাত্রীরা ভুলবশত সিএনজি স্কুটারে ফেলে যাওয়া ভ্যানিটি ব্যাগ, মানিব্যাগ, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন মালামাল কিছু চালক সযতেœ রেখে দেন। পরে সেগুলো যাত্রীরা খুঁজতে আসলে ফেরত দিয়ে দেন। এটা তাদের সততার কারণেই সম্ভব হয়। তারা এগুলো সিএনজি স্কুটার মালিক সমিতির কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন।
এসব মালামাল মালিকপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রহ করে রাখেন। পরে যাত্রীরা এসে সনাক্ত করলে সেগুলো তাদের ফিরিয়ে দেন। যাত্রীরা তাদের হারিয়ে যাওয়া জিনিস খুঁজে ফেলে শান্তির দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। এসব কাজ অবশ্যই প্রশংসনীয়।
এসব ভালো মানুষদের ভালো কাজ দেখে আমরাও ভালো হতে চাই, ভালো হতে ইচ্ছে করে। যদি এভাবে ভালো কাজ করা যায় তাহলে মনে দারুণ প্রশান্তি সংগ্রহ করা যায়। ইচ্ছে করলে তো সিএনজি চালকরা সেসব মালামাল নিজেরাই নিতে পারতেন। কিন্তু তারা সেটা করেননি! কেন? সততার কারণেই তারা সেটা করেননি, করতে পারেননি।
কারণ তারা এটা বোঝেন যে, মানুষের হক ভোগ দখল করা অন্যায়। সততা তাদের মনে রয়েছেই। সেই সততার কারণেই তারা অন্যায় কাজ করতে পারেন না। অতএব, অন্যের মনে হাসি ফিরিয়ে দিতে হলে, অন্যের মনে শান্তি ফিরিয়ে দিতে হলে, অন্যের মনে আনন্দ দিতে হলে সততার উপরে কোনো কিছুই থাকতে পারে না।
আর তাই, সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা!
90 সর্বমোট পড়েছেন, 1 আজ পড়েছেন
