অশ্বগন্ধার উপকারিতা

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের এমন কিছু জরিবুটি আছে যেটাকে হার্বস বলা হয়। এই অশ্বগন্ধা পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অনেক রকম ভাবে কার্যকরী। এটি নানা ব্যবহারিক প্রয়োগ করলে সবাই সুস্থ থাকবে। অশ্বগন্ধা এক আশ্চর্য ভেষজ।

পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়াও আর কি কি কাজে লাগে?
এই অশ্বগন্ধা খোঁজ তিন হাজার বছর বা তারও বেশি বছর আগে। তখনকার বিভিন্ন মনীষীরা এই সমস্ত আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরি করতেন আর এইরকম আয়ুর্বেদিক খুঁজে তার বিভিন্ন নামকরণ করতেন।

এই অশ্বগন্ধা গাছটিকে হার্বস বলা হয় কেন?
বলা হয় তার কারণ এই অশ্বগন্ধার মূলের মধ্যে থেকে অশ্বের অর্থাৎ ঘোড়ার মতন এক রকমের গন্ধ বের হয়। শুধু এটাই না এই অশ্বগন্ধা ঘোড়ার মত বল সম্পন্ন। আর বল দ্রুততায় কাজ করে এই অশ্বগন্ধা।

পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অশ্বগন্ধা
এই অশ্বগন্ধার বৈজ্ঞানিক নাম হল উলানিয়া সম্নিফেরা (Withania somnifera)

তবে এটিকে আর একটা নামেও বলা হয় তা হল ইন্ডিয়ান জিনসেং তার কারণ হল এই জিংসেন টা হল একটা চায়না হার্বস। আর এটা আমাদের গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। পুরো পৃথিবীতে এটি প্রচারিত এবং পরিচিত হয়ে আছে। এই জিংসেন টা সম্পূর্ণরূপে বলপূর্বক এবং পুরুষালী শক্তি বৃদ্ধিকারক একটা হার্বস।এর সঙ্গে পুরোপুরি লড়াই করতে পারবে সবার পরিচিত অশ্বগন্ধা।

অশ্বগন্ধা কিভাবে খেতে হবে?
বাজারে পাউডার বা ট্যাবলেট পাওয়া যায় অনেক সময় এর মূল টাও পাওয়া যায়। বাজারে যে কোন আয়ুর্বেদিক কোম্পানির এই অশ্বগন্ধা চূর্ণ হিসাবে পাওয়া যায় অথবা ট্যাবলেট হিসেবে পাওয়া যায়।

প্রথমে এটি দুধের সঙ্গে ৪-৫ গ্রাম মত পাউডার মিশিয়ে খেতে হবে এবং দুধটা হালকা গরম রাখতে হবে। এর সঙ্গে কিছুটা মধু মিশিয়েও খেতে হবে অথবা মিশ্রী ও মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

আর ট্যাবলেট রাতের বেলায় একটা করে খেতে হবে।এছাড়াও অশ্বগন্ধার যে মূল আছে, সেটাকে চায়ের মতো করে জলের মধ্যে ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে খেতে হবে তবেই অশ্বগন্ধার থেকে উপকারিতা পাওয়া যাবে।

বিজ্ঞাপণ

অশ্বগন্ধা কিভাবে কাজ করে?
যাদের ব্লাড সুগার আছে অর্থাৎ যাদের সুগারের মাত্রাটা অনেকখানি বেশি আছে। তাদের ক্ষেত্রে, এই অশ্বগন্ধা খুবই কার্যকরী। যার ফলে ব্লাড সুগার মাত্রাটা অনেকখানি কম করে দেয়। তবে এক্ষেত্রে, যাদের সুগারের মাত্রাটা অনেক বেশি। তারা যদি সুগারের ওষুধ খায় অথচ তার সঙ্গে সঙ্গে যদি খুব বেশি পরিমাণে এটা খায় তাহলে সুগার কিছুটা কমে যাবে।

তাই ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে একটু সচেতন হতে হবে। খুব বেশিদিন টানা এই ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।

এক মাসে ১৫ দিন মত খেলে তারপরে অন্ততপক্ষে ৩-৪ মাস খাওয়া উচিত নয়। আবার ৩-৪ মাস পর ১৫ দিন মত এটা খাওয়া যায়। একবারে এই ঔষধ খেয়ে গেলে হবে না। এটা কোলেস্টেরল মাত্রাটাকে অনেকখানি কমাতে সাহায্য করে।শুধু কোলেস্টেরল না তার সঙ্গে সঙ্গে টি.জি. র মাত্রাটা কেও কমাতে সাহায্য করে।

যারা মানসিক চাপে ভুগছে।
যারা ডিপ্রেশন এর মধ্যে আছে বা ভীষণভাবে যারা চিন্তার মধ্যে আছে। তারা যদি অশ্বগন্ধা খায়। তবে তাদের ক্ষেত্রে, বেশ ভালো উপকার হবে। খাওয়ার বিধি একই রকমই।
কুসুম কুসুম দুধের মধ্যে ৪-৫ গ্রাম মতো দিয়ে খেতে হবে। আবার হালকা গরম জলের মধ্যে ওই একই পরিমাণ ৩-৪ গ্রাম মিলিয়ে খেতে হবে। এতে খুবই ভালো রকম ঘুম আসবে। কিন্তু যাদের ঘুমের কোন সমস্যা নেই তাদের খাওয়া উচিত নয়।

এরপর সবথেকে বড় যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে অশ্বগন্ধা সেটি হল–

পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অশ্বগন্ধা (Horse odor to increase male fertility)
পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অশ্বগন্ধা স্পার্মের গুণ বা গুনাগুন এবং পরিমাপ দুটোই বাড়াতে সাহায্য করে।
টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রাটা অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়।
এমনকি এটা পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা টা কেউ বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
যেসব পুরুষের স্বপ্নদোষে ভুগছে। তাদের ক্ষেত্রে এটা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।
যদি এক মাস বা ১৫ দিন মত টানা খাওয়া যায়।
তাহলে এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

বন্ধ্যাত্ব নারীর ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধার উপকারিতা (Benefits of horse odor in infertility women)
এই অশ্বগন্ধার উপকারিতা- বন্ধ্যাত্ব নারীদের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী।

এই অশ্বগন্ধার কাচা মূল এর অংশ ২৫ গ্রাম মত নিতে হবে।
তারপর সেটা ৪ কাপ জল আর ১ কাপ দুধের মধ্যে নিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে।
ফুটানোর পর যখন চার ভাগের এক ভাগ হয়ে গেল তখন সেটা গাওয়া ঘি এর মধ্যে করে ঋতু স্নানের পরের দিন থেকে আবার পুনরায় ঋতুস্রাব শুরু হওয়া পর্যন্ত খেয়ে যেতে হবে। তবেই উপকারিতা পাওয়া যাবে।
তবে এটি শিশুদের ক্ষেত্রে খাওয়ানো যায়।
কিন্তু ওই একই পরিমাণ ৪-৫ গ্রাম খাওয়াতে হবে। যেসব শিশুরা খুবই দুর্বল প্রকৃতির হয়। তাদের ক্ষেত্রে, এটা খুব ভালো কাজ করে।
এমনকি পুরুষদের মাংসপেশি গঠনে অনেক খানি সুস্থ ও ভালো ভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
যেহেতু টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
তবে এত কিছু ভালো হওয়া সত্বেও।কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
যারা গর্ভবতী মহিলা তাদের ক্ষেত্রে এটা একদমই খাওয়া উচিত নয়।
আর যেসব মহিলাদেরকে বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়াতে হয়। তাদের ক্ষেত্রে,এই ঔষধ খাওয়া উচিত নয়।
আবার, কিছু কিছু মানুষ আছে,যারা কঠিন অসুখে ভুগছেন। তাদেরকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।
অনেক সময় এটা হাইটকে বাড়াতেও সাহায্য করে। যেহেতু, টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রাটা বেড়ে যায়।
সেই জন্য মাংস উৎপন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাইট টাকেও বাড়িয়ে দেয়।
তবে হাইট বাড়ানোর ক্ষেত্রে খাওয়া- দাওয়া ঠিক রাখতে হবে।তার সঙ্গে সঙ্গে হালকা ব্যায়ামও করা দরকার।

এরপর অনেক সময় এটা জানা গেছে যে,

অশ্বগন্ধার পাতা Benefits of Ashwagandha tree থেকে ওজন কমানোও যায়।
তবে খেয়াল রাখতে হবে,অশ্বগন্ধার পাতা ঠিকভাবে চিনে খেতে হবে। অর্থাৎ পর পর ৩ দিন ৩ টে করে পাতা খেতে হবে।
সকালে, দুপুরে এবং রাতের দিকে একটা করে খেতে হবে। অর্থাৎ পর পর সেটা ৩ দিন খেতে হবে।
তার সঙ্গে সঙ্গে পরিমিত খাবার খেতে হবে।
ওজনের ওপর বেশ খানিকটা কাজ করবে।তবে সেক্ষেত্রে, অশ্বগন্ধা পাতাকে চেনা খুবই প্রয়োজন।
মূল গাছটি শনাক্ত করুন (Identify the original plant)
এই অস্বগন্ধ পাতা দু ধরনের হয়। জঙ্গলী আর সাধারণ অশ্বগন্ধা। জংলি অশ্বগন্ধার পাতাটা একটু মোটা ধরনের হয়। আর সাধারন অশ্বগন্ধার পাতাটা পাতলা ও নরম হয়। আর এর ফলটা সাধারণত লাল চেরির মতো হয়ে থাকে। সুতরাং অশ্বগন্ধা পাতা চিনে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। তবেই উপকৃত হওয়া যাবে।

অশ্বগন্ধার উপকারিতা বা Benefits of Ashwagandha tree নিবন্ধ টি উপকারী কিনা তা কমেন্ট করে জানাবেন।

Disclaimer: উপরোক্ত রোগের বিষয় যে সমস্ত ভেষজ উদ্ভিদের দ্বারা রোগ নিরাময়ের বিষয় বলা হল সেগুলি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই কোন বা আয়ুর্বেদিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করবেন।

Loading

শেয়ার করুন