কিশোর-তরুণ-যুবকরা কেন পথভ্রষ্ট হচ্ছে?

সম্পাদকীয়

বর্তমানে ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে ইন্টারেনেটের ব্যবহার। আর এর শিকার হচ্ছে আমাদের নতুন প্রজন্ম শিক্ষার্থীরা। গ্রাস করে নিচ্ছে এক একটি প্রাণ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে। হারিয়ে ফেলছি নতুন ভবিষ্যৎ। প্রযুক্তির আশীর্বাদকে আমরা অভিশাপ হিসেবে তুলে দিচ্ছি তাদের হাতে। কেননা বিনোদনের কোনো পথ খোলা নেই।

আমরা লক্ষ্য করলে দেখবো যে, অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তারা বিনোদন করতে না পেরে লুকিয়ে লুকিয়ে স্মার্টফোনে পর্নো দেখা, অনলাইনে গেম খেলা, অনলাইনে জুয়া খেলছে। তাছাড়া যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও দেখার কাজে শিক্ষার্থীদের একটা অংশ জড়িত হয়ে আছে। এর নেতিবাচক প্রভাব যেমন পরছে, তেমনি সামাজিক সম্পর্কও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। সেই সাথে মানসিকভাবে অসুস্থও হয়ে পরেছে অনেক শিক্ষার্থী। তাাড়া জীবনের কোনো না কোনো সময়ে মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়ে পরে অধিকাংশ শিক্ষার্থী।

এর প্রধান কারণ-পারিবারিক নিয়ন্ত্রণহীনতা। পরিবারগুলো সচেতন হলে এসব শিক্ষার্থীকে বাঁচানো সম্ভব হতো। কিন্তু তারাই আবদার হিসেবে তাদের হাতে স্মার্টফোন কিনে দিচ্ছেন। আর সবচেয়ে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো-অবসর কাটাতেই ইন্টারনেটের ব্যবহার বেশি হচ্ছে।

আজকাল অধিকাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেটে সময় ব্যয় করে। তাদের পড়াশোনায় মনোযোগের বিঘœতার জন্য দায়ী এই ইন্টারনেট। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ইন্টারনেটে পর্নো দেখার পাশাপাশি, সাইবার ক্রাইম, বাজি ধরা, বুলিং করা প্রভৃতি অপ্রীতিকর কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে পড়েছে এসব শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষার্থী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে করতে আত্মকেন্দ্রীক হয়ে পরেছে। সেই সাথে মানসিক চাপও অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে দেখা যায়। অনেক শিক্ষার্থী সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে বলে তাদের আচারণ আচরণে স্পষ্ট বোঝা যায়।

অবশ্য এটা স্বীকার করতেই হবে যে- উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট এখন অপরিহার্য হয়ে পরেছে। পড়াশোনার কাজে প্রায় ৯৫ শতাংশইইন্টারনেট ব্যবহার করে বলা চলে। তবে পড়াশোনার ফাঁকে অনলাইনে প্রবেশ করলে এর অধিকাংশই পড়াশোনার মনোযোগ হারিয়ে যায়। ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি তাদের পড়াশোনার মনোযোগ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

আমরা মনে করেছিলাম ইন্টারনেট আমাদের সম্পর্কগুলো আরো মজবুত করবে। মনে করাটাও স্বাভাবিক। কেননা ইন্টারনেট যোগাযোগ আরো সহজ করেছে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে আমরা এটা বলতেই পারি যে, এখন কাউকে ফোন করলে বিরক্ত হয়। আর এই বিরক্তি থেকেই মানুষ মানুষকে ফোনও করে না। কেউ কারো খোঁজও রাখে না। এমন উদাহরণের অভাব নেই বলতেই হবে। সুতরাং পারিবারিক সম্পর্কের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। দূরত্ব ঘুচিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে ইন্টারনেটের যেমন অবদান রয়েছে, ঠিক একইভাবে মন খুলে কথা বলার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা খুব একটা মন খুলে পরিবারের সঙ্গে মন খুলে গল্প গুজব করি না।

আমরা দেখি যে, দীর্ঘ সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করার কারণে শিক্ষার্থীরা নানাবিধ শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন। এ ছাড়াও ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি দেখা, যৌন উত্তেজক গল্প শোনা কিংবা পড়া ইন্টারনেট ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীদের এক অন্যতম আকর্ষণ। শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি বা যৌন উত্তেজক বিষয় সম্পর্কিত ওয়েবসাইট দেখে সারা রাত ধরে। এর ফলে বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে অসম্মানের দৃষ্টিতে দেখেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও তরুণ সমাজের মানসিক স্বাস্থ্যে পড়েছে এর ভয়াবহ প্রকোপ। অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনাও বাড়াচ্ছে সমস্যা।

বিশ্বায়নের যুগে ইন্টারনেট ব্যবহার না করলে আমাদের তরুণ প্রজন্মই পিছিয়ে পড়বে। শিক্ষার্থীদের মাঝে ডিজিটাল লিটারেসি না থাকায় তারা ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আসক্তি কাটিয়ে উঠতে কাউন্সেলিং, থেরাপি এবং শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম প্রদান করা। সামাজিক ও পারিবারিক যোগাযোগে ইন্টারনেট নির্ভরতার পরিবর্তে সরাসরি যোগাযোগকে উৎসাহিত করা অন্যতম। আমরা মনে করি, এখনই লাগাম না টানলে শিক্ষার্থীদের বাঁচানো যাবে না। ধীরে ধীরে তারা মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছে।

Loading

শেয়ার করুন