ডাক্তার ও রোগী সম্পর্ক নিয়ে কিছু কথা

ডাক্তার-রোগী সম্পর্ক সব দেশে সব সময় একটি অতি সংবেদনশীল ও নাজুক সম্পর্ক। ডাক্তারদের ওপর মানুষের নির্ভরতা এত বেশি যে অনেক সময় বলা হয় ডক্টর ইজ নেক্সট টু গড।

কিন্তু নির্ভরতা যেখানে বেশি, আস্থার সংকটও সেখানে মাঝেমধ্যে তীব্র হতে পারে। সম্প্রতি সেন্ট্রাল হাসপাতালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ব্লাড ক্যান্সারে মারা গেলে আবারও ডাক্তারদের ওপর হামলা ও ক্লিনিক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। প্রায়ই চিকিৎসায় ‘গাফিলতি, অবহেলার’ অভিযোগে, এমনকি ‘ভুল চিকিৎসার’ অভিযোগে ডাক্তারদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। কেন এই ভুল-বোঝাবুঝি? এর নিরসন হবে কিভাবে?

জামা ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিন জার্নালে এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে কী কী কারণে ডাক্তার-রোগীর মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা যায় দ্বন্দ্ব সৃষ্টির কারণ : ১. অনুচিত, অসহায় অবস্থায় রোগী রেখে দেওয়া (৩২ শতাংশ), ২. রোগী ও তার স্বজনদের মতামতকে কম মূল্য দেওয়া (২৯ শতাংশ), ৩. তথ্য সরবরাহ ভালোভাবে না করা (২৬ শতাংশ) ও ৪. রোগী ও তার স্বজনদের মনোগত অবস্থান ও প্রেক্ষিত বুঝতে না পারা (১৩ শতাংশ)। এককথায় জনগণের কিছু ‘ধারণাগত’ (পারসিভড) বিশ্বাসের কারণে এই অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভের জন্ম হয়। আমি মনে করি, একই কার্যকারণ আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে অন্তত কিছুসংখ্যক ডাক্তারের আচরণ, পেশাগত দক্ষতার ঘাটতি নিয়ে জনমনে যে প্রশ্ন তার প্রতিবিধানের দায়িত্ব বিএমডিসিসহ ডাক্তারসমাজের কর্ণধারদের নিতে হবে। কানাডিয়ান মেডিক্যাল প্রটেকটিভ অ্যাসোসিয়েশন এক জরিপে দেখিয়েছে রোগী ও স্বজনদের অন্তত ১৫ শতাংশ থাকে ‘ডিফিকাল্ট’, যাদের হ্যান্ডেল করা ডাক্তারদের জন্য সত্যি দুরূহ কাজ। তেমনি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ডাক্তারের কারণে পুরো ডাক্তারসমাজকে অপবাদ দেওয়া কতটুকু সুবিবেচনার কাজ, তা-ও সবাইকে ভেবে দেখতে হবে। দেখা যাক, ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তার কতটুকু স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ত্রুটি (যা মূলত স্বাস্থ্য প্রশাসনের অংশ) ও আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য আর কতটুকু সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের।

বিজ্ঞাপণ

১. হাসপাতালে অত্যধিক রোগীর চাপ ও স্বল্পসংখ্যক ডাক্তার থাকার কারণে দায়সারা গোছের রোগী দেখা, সব ওষুধ না পাওয়া, ওষুধ চুরি হওয়া, বেড না পাওয়া, খাবারের মান ভালো না হওয়া, বাথরুমসহ সব নোংরা, আয়া-সুইপার-দারোয়ান-ওয়ার্ডবয়দের দৌরাত্ম্য, দুর্নীতি, হয়রানি ইত্যাদি রয়েছে। এসবের কোনোটির দায়ভারই ডাক্তারদের নয়, এগুলো পুরোপুরি প্রশাসনের দায়িত্ব, যা বাইরে থেকে জনগণ বুঝতে পারে না। দেশের সব সরকারি অফিসেও এ রকম হয়রানি, দুর্নীতি হয়; তবে সেনসিটিভ বলে হাসপাতালের দিকে মানুষের কড়া নজর। আমরা ডাক্তাররাও চাই একটি জবাবদিহিমূলক, স্বচ্ছ ও রোগীবান্ধব পরিবেশ। সংবাদমাধ্যম এসবের জন্য ডাক্তারদের দায়ী না করে স্বাস্থ্য প্রশাসনকে চাপ দিলে অবস্থার উন্নতি ঘটতে পারে।

২. ল্যাবরেটরি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় চার্জ বেশি, ভুল রিপোর্ট হয়, একেক জায়গায় একেক রিপোর্ট ইত্যাদি। অনেকেই জানে না বেশির ভাগ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের মালিক ডাক্তার নন, ব্যবসায়ী। উপরোক্ত অভিযোগগুলো ডাক্তারদেরও। এসবের প্রতিকার না হলে ভালো চিকিৎসা দেওয়াও কঠিন। এসব তদারকির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিশেষ সেল আছে। এগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতা, ডাক্তারদের গাফিলতি, অবহেলা নয়।

৩. ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা ব্যবসা জমানোর জন্য কমিশন প্রথা চালু করেছেন। কিছুসংখ্যক লোভী ডাক্তার এতে অংশ নেন। বর্তমানে এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সিস্টেমে দাঁড়িয়ে গেছে। এখন যদি কোনো ডাক্তার কমিশন না-ও নেন, তাতে রোগীর কোনো লাভ হয় না। তাঁরা রোগীর কাছ থেকে একই হারে চার্জ রাখেন। দেশের অন্যান্য দুর্নীতির সিন্ডিকেট যেভাবে ভাঙতে হবে, এই সিন্ডিকেটকেও সেভাবে মোকাবেলা করতে হবে। এর জন্য সব ডাক্তারকে বদনাম দেওয়া অন্যায্য কাজ।

৪. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ ‘ভুল চিকিৎসায়’ রোগীর মৃত্যু। চিকিৎসায় ভুল হয়েছে কি না এটি একমাত্র আরো উচ্চতর ও অভিজ্ঞ সিনিয়র ডাক্তার ছাড়া অন্য কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তাই রোগীর স্বজনদের মনে হলো বা কোনো সাংবাদিকের মনে হলো ‘ভুল চিকিৎসা’ আর সেটি ফলাও করে সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা মানে প্রমাণ ছাড়া ডাক্তারকে খুনি বলা। তেমন আশঙ্কা যদি সত্যি মনে জাগে, সে ক্ষেত্রে বিএমডিসির কাছে অভিযোগ করতে হবে এবং বিএমডিসিকেও লোকদেখানো নয়, দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

তাই সার্বিক বিবেচনায় আমাদের দেশের ডাক্তারদের নামে যেসব অভিযোগ-নালিশ করা হয় তার অন্তত ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশের দায়ভার তাঁদের ওপর বর্তায় না। কিছু ডাক্তারের অভব্য আচরণ, উন্নাসিকতা, দায়িত্বে অবহেলা শুধু সাধারণ মানুষকে ক্ষুব্ধ করে না, অনেক ডাক্তার ও তাঁদের আত্মীয়দের জন্যও সেগুলো অপমানজনক ও কষ্টদায়ক। শুধু পাঠ্যপুস্তকে ‘বিহেভিয়ারাল সায়েন্স’ বা ‘নৈতিক’ শিক্ষা ঢুকিয়ে দিয়ে কাউকে সদাচরণ শেখানো যায় না, নৈতিকতা শেখানো যায় না। মূল্যবোধ, সদাচরণ—এগুলো পরিবার, সমাজ থেকেই শিখে আসতে হবে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিও থাকতে হবে। প্রতিদিন ওয়ার্ড রাউন্ডে, সাপ্তাহিক রোগী ব্যবস্থাপনা মিটিংয়ে সিনিয়র ডাক্তার বা প্রফেসররা এসব ব্যাপারে তদারকি ও নজরদারি করতে পারেন।

সর্বোপরি রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ বিএমডিসিকে দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে তা সর্বসাধারণকে জানিয়ে দিতে হবে। যদি জনগণ দেখতে পায় প্রতিকার পাওয়ার সঠিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাহলে হয়তো আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা কমে আসবে। আর ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করার জন্য ডাক্তারদের ‘দ্বন্দ্ব নিরসন’ (কনফ্লিক্ট রেজল্যুশন)-এর মনো-সামাজিক কৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।

ঔষধ পেতে যোগাযোগ করুন :

হাকীম মিজানুর রহমান (ডিইউএমএস)

হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।
একটি বিশ্বস্ত অনলাইন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান।

মুঠোফোন : 01742057854 (সকাল দশটা থেকে বিকেল ৫টা)

ইমো/হোয়াটস অ্যাপ : 01762240650

শ্বেতীরোগ,  একজিমা, যৌনরোগ, পাইলস (ফিস্টুলা) ও ডায়াবেটিসের চিকিৎসক।

সারাদেশে কুরিয়ার সার্ভিসে ঔষধ পাঠানো হয়।

Loading

শেয়ার করুন

Leave a Reply