ধর্ষণের নতুন ফাঁদে ভুক্তভোগী নারী : কাকে বিশ্বাস করবে নারীরা?

সম্পাদকীয়

ধর্ষণের ভয়াবহতার পাশাপাশি কৌশলী ধর্ষকদের কর্মকাণ্ডে আঁতকে উঠছে চাঁদপুরসহ দেশবাসী। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, আরো নতুন নতুন ফাঁদের শিকার হবে নারীরা। সত্যিকারে কোনটা যে ফাঁদ সেটাই বোঝার আগে শিকার হয়ে যায় নারীরা। এতে করে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন থাকলেও রক্ষা পায় না নারীরা। এমন পরিস্থিতি হয়ে যে, ‘তোমরা কোনোভাবেই কাউকে বিশ^াস করো না’-এমন পরিস্থিতি। সত্যিই তো, কাকে বিশ্বাস করবে নারীরা!

চাঁদপুর রিপোর্ট ও প্রিয় সময়ে প্রকাশিত ‘ চাকরির ফাঁদে নারী ধর্ষণ করতেন চাঁদপুর নার্সিং ইন্সটিটিউটের উচ্চমান সহকারী’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি পড়ে পাঠক সমাজ আঁৎকে উঠেছে। ঘটনাটি এমন ব্যক্তি ঘটিয়েছে যে, নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত ব্যক্তিই এমন কাজ করেছে। সেবার অন্তরালে কৌশলে ফাঁদ পাতা থাকবে-নারীরা শুরুতে বুঝতেই পারে না। সত্যিই নৈতিক সচেতনতার অভাবেই বাড়ছে ধর্ষণের মতো ঘটনা। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর নারীরাই ধর্ষণের ঘটনার শিকার হয় সবচেয়ে বেশি। আসলেই এসব পরিবার সব সময়ই নানা ধরনের টানাপড়েনের মধ্যে থাকে। এর সুযোগ নেয় এক ধরনের নরপশুরা। তারা সুযোগ বুঝে এসব পরিবারের নারীদের নিজের কাছে নেয়। এমন অনেক নারীরা রয়েছে যারা সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে বেশির ভাগ নারীই বিচার চাওয়ার কথা চিন্তাও করে না।

আমরা চাঁদপুরবাসী এমন নির্লজ্য ব্যক্তিকর অনৈতিক নারী লিপ্সায় উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। কেন এমন নৃশংসতা? এ ধরনের খবর আমাদের সবাইকে ব্যথিত করে, কাঁদায়, উদ্বিগ্ন করে। এ ঘটনায় বিচারের দাবি ধ্বনিত হচ্ছে চারিদিকে। দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া চাই এমন কর্মকাণ্ডের জন্যে। আমরা মনে করি, এ সমাজ কলুষমুক্ত করতে হলে অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শান্তি নিশ্চিত করতে না পারলে পঙ্কিলতার আবর্তে ঘুরপাক খাবে সমাজ। সুতরাং এখনই সময় লাগাম টানার!

আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জেনেছি, চাঁদপুর নার্সিং ইন্সটিটিউটের উচ্চমান সহকারী মোঃ আল-আমিন সিকদার (৩৬)-এর আউট সোর্সিং চাকরির ফাঁদে পড়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী নারী। তার এ ধরণের যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ না পেলেও সর্বশেষ একজন কিশোরীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে আদালতে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন আল-আমিন। এতেই অতীতের সমস্ত ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলো! আমরা জেনেছি যে, গত মে মাসের ১৮ তারিখে আল-আমিন অফিস সহায়ক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৫ জুন মামলা দায়ের করেন কিশোরীর মা। কিন্তু এই ঘটনাটি জানাজানি হয় এবং মামলার তথ্য প্রতিবেদকের হাতে আসে মঙ্গলবার ২০ জুন।

অভিযুক্ত আল-আমিন সিকদার চাঁদপুর শহরের কাঁচা কলোনী এলাকার মোঃ নূরনবীর ছেলে। জানা গেছে, গত এক বছর পূর্বে ধর্ষণের শিকার কিশোরী চাঁদপুর নার্সিং ইন্সটিটিউটে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে চাকরি নেয়। তার দায়িত্ব ছিল চাঁদপুর নার্সিং ইন্সটিটিউটে নীচ তলায় উচ্চমান সহকারী আল-আমিন সিকদারের কক্ষে। তখন থেকেই সে কিশোরীকে কারণে অকারণে কাছাকাছি আসা এবং কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। এরপর গত এপ্রিল মাসের বেতন নেয়ার জন্যে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে পরিকল্পতভাবে দরজা বন্ধ করে ধর্ষণ করে। ওই অবস্থায় কিশোরী কোনো মতে তার ইজ্জত বাঁচানোর চেষ্টা করে এবং চিৎকার দিয়ে ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে।

সে কিশোরীর সাথে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক ঘটিয়েছে বলে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা গেছে। অনেকদিন থেকেই তাকে কু-প্রস্তাব দিতে থাকে। এরপর তাকে সুযোগ সৃষ্টি করে অফিসের বাথরুমে এবং ঢাকায় অফিসের কাজে কথা বলে লঞ্চে নিয়ে যাওয়ার সময় ধর্ষণের চেষ্টা করে। এছাড়া কিশোরীকে দুর্বল করার জন্যে সে পূর্বে যেসব নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক করেছে সেসব ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে উত্তেজিত করে এবং ধর্ষণের জন্য সম্মত করায় বলে জানা গেছে।

এখানে একটি কথা বলতে চাই যে, প্রভাবশালীরা ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েও বেঁচে যায় বিভিন্নভাবে। কিন্তু আমরা মনে করি, প্রকাশিত ঘটনাটিতে সে রকম কিছু হবে না! অন্যথায় চাঁদপুরবাসীর মনে প্রশ্নই থেকে যাবে!

সেটা আমরা কেউ মেনে নিতে পারবো না বলেই হতে পারে। আমরা মনে করি, ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ যে মাত্রায় বেড়েছে, লাগাম টেনে না ধরা গেলে তা সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নেবে। ধর্ষণ প্রতিরোধে জরুরি অপরাধীর যথার্থ শাস্তি নিশ্চিত করা। দুর্বল ভিকটিমদের পক্ষে সমাজসহ রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমরা অপরাধ তদন্তে ও অপরাধীদের আইন আমলে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিরপেক্ষ ভূমিকা ও সঠিক তদন্ত অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছি।

Loading

শেয়ার করুন