বজ্রপাত কি ও এর কারণ এবং বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায়

বজ্রপাত কি ও এর কারণ :

হঠাৎ বিদুৎ এর ঝলকানি তার পর গুরু করে বিকট শব্দ। এই পুরো প্রক্রিয়াকে বজ্রপাত বলা হয়।বজ্রপাত প্রকৃতির সব থেকে সুন্দর ও ভয়ঙ্গকর দৃশ্য।এই কারনে আগের দিনের মানুষ বজ্র কে দেবতা জ্ঞান করত। বজ্রপাত প্রকৃতির একটি সাধারণ ঘটনা।

প্রতি সেকেন্ডে ৪০ টির মত বজ্র সৃষ্টি হয়।পানি চক্রের নিয়ম আনুযায়ি জলীয় বাষ্প যখন সূর্যের তাপে উপরে উঠতে থাকে তখন অন্যান্য বায়ু ও জলীয় কনার সাথে ঘর্ষনের ফলে বিদ্যুৎ তৈরি হয় । ফলে একেকটা জলীয় কণা ব্যাটারির মত কাজ করে।

ইলেক্ট্রন জলীয় কণার নিচের দিকে বেশি অবস্থান করে বলে এই অংশে ঋনাত্বক চার্জ জমা হয় আর উপরে ধনাত্বক চার্জ জমা হয়।

যখন এই ধনাত্বক ও ঋনাত্বক চার্জ মিলিত হয় তখনই বজ্রের সৃষ্টি হয়।এই সময় তড়িৎ বিভবের পার্থক্য ১০ মিলিয়ন ভোল্ট পর্যন্ত হতে পারে আর তরিৎ প্রবাহের মাত্রা ৩০,০০০ এম্পায়ার পর্যন্ত হতে পারে।

বিভবের পার্থক্যের উপর প্রবাহের মাত্রা নির্ভর করে।এই সময় বাতাসের তাপ মাত্রা ২০০০০ থেকে ৩০০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যায়।এই প্রচন্ড শক্তির স্থায়িত্ব মাত্র সেকেন্ডের দশ ভাগের এক ভাগ। আপনি যদি বজ্রপাতের মধ্যে পরেন তাহলে সাথে সাথে মারা যাবেন।

তবে আশার কথা হলো মোট বজ্রপাতের মাত্র ২৫ ভাগ ভুপৃষ্টে পরে বাকি গুলো মেঘের মধ্যেই ঘটে থাকে।যখন মেঘের মধ্যে ধনাত্বক আর ঋনাত্বক চার্জ মিলিত হয় তখন তা মেঘের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।

এই সময় মেঘের জল কনা ভেংগে অক্সিজেন আর হাইদ্রোজেনের এক বিস্ফোরন ঘটে ফলে প্রচন্ড শব্দ তৈরি হয়।শব্দ আর বিদ্যুৎ একি সাথে তৈরি হলেও গতির পার্থিক্যের কারনে আমরা আগে আলো দেখতে পাই আর পরে শব্দ শুনতে পাই।আগেই বলেছি জল কণার নিচের অংশে থাকে ঋনাত্বক চার্জ । আর ভুপৃষ্ট হচ্ছে ধনাত্বক চার্জ।

যখন এই দুই চার্জ একত্রিত হয় তখন যে বজ্রের সৃষ্টি হয় তা ভুপৃষ্টে আঘাত হানে।কিন্ত এই কাজ সহজ নয় কারন এই দুই চার্জের মধ্যে কোণ মাধ্যম নেই।বাতাস বিদ্যুৎ পরিবহন করে না।তাহলে কি ভাবে ঘটে এই দুই চার্জের মিলন?

মেঘের বিপুল শক্তিশালী বিদ্যুৎক্ষেত্র তার চারপাশের বাতাসের অপরিবাহী ধর্মকে নষ্ট করে দেয়, যাকে বলে Dielectric Breakdown. মেঘে অবস্থিত বিদ্যুতক্ষেত্র যখন যথেষ্ঠ শক্তিশালী হয় (প্রতি ইঞ্চিতে প্রায় ১০,০০০ ভোল্ট) ,তখন তার আশেপাশের বাতাস পজিটিভ এবং নেগেটিভ চার্জে বিভক্ত হয়ে যায়। এই আয়োনিত বাতাস প্লাজমা নামেও পরিচিত। বাতাস আয়োনিত হয়ে মেঘ এবং ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বিদ্যুৎ চলাচলের পথ বা শর্ট সার্কিট তৈরী করে দেয় এবং বজ্রপাত ঘটায়।এই বিদ্যুৎ তখন প্রায় ৬০০০০ কিলো মিটার বেগে উপরে উঠে যায় ।

বাঁচার উপায় :

দেশে সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতের পরিমাণ বেড়েছে। এতে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। কালবৈশাখী ঝড়ে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেশি। বজ্রপাতের সময় বাসা-বাড়ির মধ্যে থাকলে এর প্রভাব থেকে কিছুটা বাঁচা যায়। তবে রাস্তায় কিংবা খোলা মাঠে থাকাকালীন এমন পরিস্থিতি সামনে পড়লে কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন তার কয়েকটি উপায় জেনে নিন।

পাকা বাড়ির নিচে আশ্রয় নিন: ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোনো অবস্থাতেই খোলা বা উঁচু জায়গায় না থাকাই ভালো। এ অবস্থায় সবচেয়ে ভালো হয় যদি কোনো দালানের নিচে আশ্রয় নিতে পারেন।

উঁচু গাছপালা ও বিদ্যুতের লাইন থেকে দূরে থাকুন :

বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই এসব জায়গায় যাবেন না বা কাছাকাছি থাকবেন না। ফাঁকা জায়গায় কোনো যাত্রী ছাউনি বা বড় গাছ ইত্যাদিতে বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা অত্যন্ত বেশি থাকে।

জানালা থেকে দূরে থাকুন: বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি থাকবেন না। জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভেতর থাকুন।

ধাতব বস্তু এড়িয়ে চলুন: বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না। এমনকি ল্যান্ড লাইন টেলিফোনও স্পর্শ করবেন না। বজ্রপাতের সময় এগুলোর সংস্পর্শ এসে অনেকে আহত হন।

টিভি-ফ্রিজ থেকে সাবধান: বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও ধরবেন না। বজ্রপাতের আভাস পেলে আগেই এগুলোর প্লাগ খুলে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করুন। অব্যবহৃত যন্ত্রপাতির প্লাগ আগেই খুলে রাখুন।

গাড়িতে থাকলে: বজ্রপাতের সময় রাস্তায় গাড়িতে থাকলে যত দ্রুত সম্ভব বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করুন। যদি প্রচণ্ড বজ্রপাত ও বৃষ্টির সম্মুখীন হন তবে গাড়ি কোনো গাড়িবারান্দা বা পাকা ছাউনির নিচে নিয়ে যান। এ সময় গাড়ির কাঁচে হাত দেয়া বিপজ্জনক হতে পারে।

ঝড়-বৃষ্টির সময় রাস্তায় পানি জমাটা আশ্চর্য নয়। তবে বাজ পড়া অব্যাহত থাকলে সে সময় রাস্তায় বের না হওয়াই মঙ্গল। একে তো বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। উপরন্তু কাছাকাছি কোথাও বাজ পড়লে বিদ্যুত্‍স্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।

পা ঢাকা জুতা পড়ুন: খালি পায়ে বা পা খোলা জুতো নয় বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। যদি একান্ত বেরোতেই হয় তাহলে পা ঢাকা জুতো পড়ে বের হোন। রবারের গাম্বুট এ ক্ষেত্রে সব থেকে ভালো কাজ করবে।

চার পাশে খেয়াল রাখুন বজ্রপাতের সময় রাস্তায় চলাচলের সময় আশেপাশে খেয়াল রাখুন। যে দিকে বাজ পড়ার প্রবণতা বেশি সে দিক বর্জন করুন। কেউ আহত হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

Loading

শেয়ার করুন